About My Mag

Mountain View

শুক্রবার, ২৮ এপ্রিল, ২০১৭

অন্যরকম এক প্রেমকাব্য

অন্যরকম এক প্রেমকাব্য
পতিতার কন্যা নাসিমা। তার প্রতি সমাজের অন্যরা যখন ঘৃণাভরে তাকায় তখন তার জন্য ভালবাসা উতলে ওঠে কবিরের। এই কবির একজন সমাজকর্মী। দুজনের প্রেম সব ভেদাভেদ তুচ্ছ করে চূড়ান্ত রূপ নেয়। বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন তারা।
অন্যরকম এই প্রেমকাব্যের খবর দিয়েছে অনলাইন রেডিফ। এতে বলা হয়েছে, কবিরের বাড়ি ভারতের রাজস্থানে। নাসিমার বাড়ি বিহারে। দু’জনের ভাষা ভিন্ন। সংস্কৃতিতেও রয়েছে কিছুটা ভিন্নতা। সামাজিক এত দূরত্ব থাকা সত্ত্বেও তারা একে অন্যের কাছাকাছি এসেছেন।

নাসিমার পুরো নাম নাসিমা খাতুন। অনেক দিন আগের কথা নয়, তিনি ছিলেন ‘পতিতার মেয়ে’ হিসেবে পরিচিত। জন্মের পরই তাকে পরিত্যাগ করে তার মা। এ অবস্থায় তাকে লালন পালন করেন এক নারী, যিনি নিজে একজন যৌনকর্মী। বিহারের মুজাফ্ফরপুরের এই পতিতালয় বেশ পরিচিত।

সেখানে নাসিমার সামনে অনেক রকম সুযোগ এসেছিল। তিনি নোংরা পথ বেছে নিতে পারতেন এবং সেটাই স্বাভাবিক পন্থা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিনি তা করেন নি। তার দৃঢ় মনোবাসনা ছিল জীবন থেকে নোংরা অতীতকে মুছে ফেলবেন। মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেন। তাই নিজে প্রতিষ্ঠা করেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ‘প্রচাম’। এখানে পতিতালয়ের শিশুকন্যাদের শিক্ষা দেয়া হয়। নাসিমা আরও এক ধাপ এগিয়ে যান। হাতে লেখা ম্যাগাজিন ‘জুগনু’ বের করেন। এতে যৌনকর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে লেখা প্রকাশিত হয়।

নাসিমা যে সমাজে বসবাস করেন সেখানে ভালোবাসা এক বিস্ময়কর ব্যাপার। এমনই এক বিস্ময়কর ভালোবাসা এসে হাজির হয় তার জীবনে। সেই ভালোবাসার নাম রাজস্থানের হংসরাজ কবির।নাসিমা বলেন, কবিরের সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ ২০০৩ সালে। তখন আমি পাটনা সফর করছিলাম। সেখানে দলিত শ্রেণীর জাতীয় এক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অংশ নিয়েছিলাম আমি। ওই প্রশিক্ষণের পরে কবির

আমাকে বিস্মিত করে বিয়ের প্রস্তাব করে। কবির সমাজকর্মী হলেও আইনজীবী। তিনি কাজ করেন দলিত শ্রেণীর মানুষের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে।

নাসিমার সঙ্গে প্রথম পরিচয়ের কথা প্রাণ খুলে বলেন কবির, প্রশিক্ষণের সময় নাসিমার কণ্ঠ আমার হৃদয় বিদীর্ণ করে। তার চিন্তাধারা ছিল স্পষ্ট। সে কোনও সাধারণ মেয়ে নয়। সৌভাগ্যক্রমে ৮ দিনের কর্মশালা শেষে সে আমাদের গ্রুপ লিডার হয়। আমি সুযোগ পেয়ে যাই তাকে কাছ থেকে দেখার। কিন্তু তার জন্মের ইতিহাস, মায়ের নোংরা জীবনের কারণে সে অনেকটা সঙ্কুচিত ছিল। তাকে আমি প্রস্তাব দিলে সে অস্বীকৃতি জানায়। বলে, এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে একজনকে অন্যজনের ভালোভাবে জানা দরকার।

২০০৪ সালে ভারত এবং ২০০৬ সালে দিল্লিতে তাদের পুনরায় সাক্ষাৎ হয়।

নিজের জীবন সম্পর্কে নাসিমা লিখেছিলেন ‘সফর’ নামে একটি বই। এতে অন্য পাঁচ যৌনকর্মীর জীবনাল্লেখ্য বর্ণনা করা হয়েছে। এ বইটি কবিরের পিতা ঘাইসালাকে উপহার দেন নাসিমা। তা পড়ে তিনি পরে ফোন করেন নাসিমাকে। বলেন, তিনি নাসিমাকে পুত্রবধূ বানাতে চান।

এরপর নাসিমার জন্মদিনে তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। শুরু হয় নাসিমা-কবিরের জীবনের নতুন এক অধ্যায়।


SHARE THIS

Author:

0 comments: